টানা সাইক্লোন বোমার আঘাতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে দশ লাখের বেশি মানুষ ক্রিসমাস কাটাচ্ছেন বিদ্যুৎ-বিহীন অবস্থায়। এ পর্যন্ত প্রবল তুষারঝড়ে অন্তত ৩৮ জন নিহত হয়েছেন।
এর মধ্যে কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই এককভাবে নিহত হয়েছেন ৩৪ জন। যখন বায়ুমণ্ডলের চাপ কমে যায়, তখন এরকম ঝড় তৈরি হয়। সাইক্লোন বোমার প্রভাবে প্রচণ্ড তুষারপাত ও তীব্র ঝড়ো বাতাস বইতে থাকে এবং তাপমাত্রা হিমাংকের নীচে নেমে যায়।
বোম্ব সাইক্লোন আসলে কী?
আমেরিকা জুড়ে ১৯ জনের প্রাণ কেড়েছে ‘বম্ব সাইক্লোন’। দুর্যোগের আবহাওয়ার জেরে ওহায়োর স্টেট হাইওয়েতে ৫০টি গাড়ির দীর্ঘ লাইনে পর পর ধাক্কা লেগে মারা গিয়েছেন অন্তত ৪ জন। এই সময় দুর্ঘটনায় মৃত্যু দেখেছে ওকলাহোমা, মিসৌরি এবং টেক্সাসও।
আমেরিকার টেক্সাস থেকে কানাডার কিউবেক পর্যন্ত প্রায় ৩,২০০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তুষারঝড়ের দাপট চলছে। এই শীতের মরসুমে বিদ্যুৎ ছাড়াই কাটাচ্ছে কানাডার অন্তারিও, ব্রিটিশ কলম্বিয়া থেকে নিউফাউন্ডল্যান্ড।
বম্ব সাইক্লোনের কবলে পড়তে পারে সে দেশও। আবহবিদরা ‘বম্ব সাইক্লোন’ গতিপ্রকৃতি নিয়ে হুঁশিয়ারি দেওয়ার পাশাপাশি এর সংজ্ঞাও জানিয়েছেন। আমেরিকার সংবাদমাধ্যম ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ জানিয়েছেন, মধ্য-অক্ষাংশের ঝড়ের কেন্দ্রভাগে বায়ুর চাপ কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টার জন্য প্রতি ঘণ্টায় ১ মিলিবার হারে হ্রাস পেলে তাকে ‘বম্ব সাইক্লোন’ বলা যায়।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আবহবিদরা জানিয়েছেন, সাধারণত স্বাভাবিক অবস্থায় বায়ুর চাপ প্রায় ১,০১০ মিলিবার থাকে। তবে আমেরিকার জুড়ে এই ঝড়ের যে দাপট চলছে, তাতে বায়ুর চাপ ১,০০৩ থেকে ৯৬৮ মিলিবার পর্যন্ত হ্রাস পাওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। বায়ুচাপ ৩৫ মিলিবার কমে গেলেও তা ‘বম্ব সাইক্লোন’ ঘটানোর জন্য যথেষ্ট।
বম্ব সাইক্লোন’ দেখা দেয় কেন?
অন্যান্য ঘূর্ণিঝড়ের মতোই দু’ধরনের বাতাসে (এ ক্ষেত্রে ঠান্ডা এবং গরম) তীব্র সংঘর্ষের ফলে এর উৎপত্তি হয়। সাধারণত, ঠান্ডা এবং শুষ্ক বায়ু উত্তর দিক থেকে নীচে নামে উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু গ্রীষ্মমণ্ডল থেকে উপরে উঠে আসে। এই দুই বিপরীতমুখী বাতাসের সংঘর্ষে ‘বম্ব সাইক্লোন’ তৈরি হয়। ‘বম্ব সাইক্লোনে’ উষ্ণ বায়ু দ্রুত গতিতে উপরে উঠতে উঠতে মেঘের মতো অবস্থা তৈরি করে। সে সময় বায়ুর চাপ কমতে কমতে ঝড় তৈরি করে। যা নিম্নচাপের কেন্দ্রের চারপাশে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে সঞ্চালিত হয়।
ঘূর্ণিঝড়ের থেকে ‘বম্ব সাইক্লোনের’ তফাত কতটা?
আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ ড্যানিয়েল সোয়াইন ‘স্কাই নিউজ়’-কে জানিয়েছেন, সমস্ত ‘বম্ব সাইক্লোন’-ই ঘূর্ণিঝড় নয়। ড্যানিয়েল আরও জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ের বহু বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে ‘বম্ব সাইক্লোনের’ মিল রয়েছে। এতে প্রবল ঝোড়ো হাওয়া, ভারী বর্ষণ এবং ঝড়ের কেন্দ্রে একটি ‘চোখ’ও তৈরি হয়। ড্যানিয়েলের ব্যাখ্যা, ঘূর্ণিঝড় সাধারণত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে তৈরি হয়। এই কারণেই গ্রীষ্মে বা শরতের শুরুতে আমেরিকায় ঘূর্ণিঝড় দেখা যায়, যখন সাধারণত সমুদ্রের জল সবচেয়ে উষ্ণ থাকে। ঘূর্ণিঝড়ের তুলনায় ‘বম্ব সাইক্লোন’ হওয়ার জন্য সমুদ্রের জলের প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন ড্যানিয়েল। তবে এগুলি স্থলভাগের পাশাপাশি সমুদ্রের উপরেও দেখা দিতে পারে। মূলত শরতের শেষে এবং বসন্তের শুরুতে সবচেয়ে বেশি ‘বম্ব সাইক্লোনের’ দেখা মেলে। ওই সময় হিমশীতল অতলান্তিকের বাতাসের উপর উষ্ণ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বায়ু ঝাঁপিয়ে পড়ে এই ঝড়ের সৃষ্টি করে।
এই ঝড়ের নাম ‘বম্ব সাইক্লোন’ কেন?
শিটংটন পোস্ট’-এর একটি প্রতিবেদন জানিয়েছে, ১৯৮০ সালের একটি গবেষণাপত্রে এই শব্দ দু’টি প্রথম বার ব্যবহার করেছিলেন আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)-র আবহাওয়াবিদ ফ্রেডরিক স্যান্ডার্স এবং জন আর গ্যায়াকুম। ‘ওয়াশিটংটন পোস্ট’-কে গ্যায়াকুম জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ের মরসুমে ঝড়ের তীব্রতা বোঝাতে তাঁরা এ হেন নামকরণ করেছিলেন।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।